নোয়াখালীর মানুষের প্রিয় মসজিদ জেলা জামে মসজিদ। মসজিদের বিশাল প্রাঙ্গণ, বড় ঘাটলা ও মসজিদের বাহ্যিক সৌন্দর্যের কারণে যে কেউই দেখে মুগ্ধ হন।
প্রতিদিনই শত-শত মুসল্লীর নজর কাড়ে জেলা জামে মসজিদ। প্রতিওয়াক্ত নামাজেই নতুন-নতুন মুসল্লি আসেন এই মসজিদে নামাজ পড়তে।
মূল সড়ক থেকে মসজিদের মেইন গেইট দিয়ে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে মসজিদের সৌদর্য্যমন্ডিত ফুলের বাগান। মসজিদ লাগোয়ো বিশাল দীঘি, দীঘির সৌন্দর্য্য যেন কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে মসজিদের। দীঘিতে রয়েছে মুসল্লিদের ওযু-গোসলের জন্য বিশাল ঘাটলা। যাহা নোয়াখালীতে বিরল।
প্রতি ওয়াক্ত নামাজের সময় মুসল্লিদের আগমনে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে পুরো মসজিদ প্রাঙ্গণ। প্রতি ওয়াক্ত নামাজে নতুন-নতুন মুসল্লিদের দেখা যায়। মসজিদের চারপাশ, দেয়াল এবং ছাদ সবটাই দেখার মতো। চারপাশে যেমন আছে মুসলিম স্থাপত্য শৈলীর নিদর্শন, তেমনিভাবে আছে দেশীয় লোকজঐতিহ্য।
মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করলেই শরীরে অনুভূত হবে অন্যরকম প্রশান্তি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ফলে গরমের সময় নামাজ পড়তে কোন কষ্টই হয়না।
মসজিদের বাহির থেকে দেখে যতটা বড় মনে হয়েছে, ভেতরের দৈর্ঘ্য-প্রশস্ততা যেন আরও বেশি। কয়েক অংশে বিভক্ত এই মসজিদে প্রতি ওয়াক্তেই যেন শত-শত মানুষ খুব আরামে নামাজ আদায় করতে পারেন।
নোয়াখালীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত “জেলা জামে মসজিদ’ মাইজদী বড় মসজিদ” নামেও পরিচিত। শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কও এই মসজিদের নামে রয়েছে।
মসজিদটির ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায়, এর নির্মাণশৈলীতে মুসলিম ও দেশি লোকজ শিল্পের কারুকার্য রয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরে থাকা পুরনো মসজিদের সুদৃশ্য ঝাড়বাতি, লোহার সূদৃশ্য গেইট ও অসংখ্য শ্বেত পাথরের টুকরো মসজিদের শোভাবর্ধন করছে অসাধারণ শৈল্পিকতায়। মসজিদের মূল ভবনে আছে ইসলামী স্থাপত্যে নির্মিত ৩টি গম্বুজ ও ৯টি মিনার।
এছাড়া ছোট একতলা ভবনে নকশাকারে ফুল, লতা-পাতা সহ কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও উপদেশমূলক বাণী খচিত রয়েছে। মসজিদের পাশেই রয়েছে মদিনাতুল উলুম নামের একটি কাওমী মাদ্রাসা। সেখানে ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করেন শিক্ষার্থীরা।
এই মসজিদে নারীদের জন্য আলাদা ভাবে নামাজ পড়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদটি যেনো একটি ইসলামিক সাহিত্য কেন্দ্র।
১৮৪১ সালের পুরাতন নোয়াখালী শহরে মরহুম ইমাম উদ্দিন সওদাগর নিজের জমিতে জামে মসজিদটি স্থাপন করেছিলেন। মূল নোয়াখালী শহর মেঘনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার সময় সেই মসজিদটিও নদীগর্ভে চিরতরে হারিয়ে যায়। পুরাতন নোয়াখালী শহর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার পরে মাইজদীতে নতুন শহর গড়ার সময়েই ১৯৫০ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
এ কারণেই নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদে পুরাতন নোয়াখালী শহরের স্মৃতি। এতে এখনও আগের মসজিদের অনেক নিদর্শন রয়েছে।
এই মসজিদটির জমির মূল প্রায় ৩ একর ৮০ ডিসিমেল। এই মসজিদটি তৈরির সময় ছোট এক তলা ভবনে অপরূপ মুসলিম ও দেশী লোকজ শিল্প সৌন্দর্যে ফুল, লতাপাতা এবং কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও উপদেশ বাণী যুক্ত করে নির্মাণ করা হয়।
মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৩০ ফুট ও প্রস্থ ৮০ ফুট আয়তনে মূল ভবনে ৩টি সুর্দৃশ্য গম্বুজ ও ৯টি সুউচ্চ মিনার ইসলামী স্থাপত্যে নির্মিত হয়।
এ মসজিদের অভ্যন্তরে আছে সুদৃশ্য ঝাড়বাতি। পুরানো মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার সময়ের ঝাড়বাতি, লোহার সুদৃশ্য গেইট ও অসংখ্য শ্বেত পথরের টুকরো রক্ষা করা গেছে।
সেগুলো এখন বর্তমান মসজিদে শোভা বর্ধন করছে। মুসল্লিদের সার্বিক সুবিধার জন্য এখানে নির্মিত হয়েছে আধুনিক শৌচাগার, গোসলখানা ও ওজু খানা।
প্রতিদিন এখানে নামাজ আদায় করেন শত-শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। জুমার নামাজে তা কয়েকগুন হয়ে যায়। এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পেরে তৃপ্ত হন মুসল্লিরা।
মাইজদী শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থান জেলা জামে মসজিদের। মসজিদের পশ্চিমে রয়েছে একটি বড় পুকুর, দক্ষিণে জিলা স্কুল, উত্তরে ষ্টেশান রোড এবং জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ও জেলা সড়ক বিভাগের ভবন,পূর্বে রয়েছে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।