নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় স্বামী, শাশুড়ি ও দেবরকে আটকে রেখে এক গৃহবধূকে (১৮) ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ৭-৮ জন বখাটে যুবকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত হানিফ (২৯) ও কামরুল (৪১) নামের দুজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় লোকজন।
রোববার (২৪ আগস্ট) বিকেলে মাইজদী পৌর বাজার এলাকা থেকে তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। আটককৃতরা হচ্ছে, জেলার সদর উপজেলার কাদিরহানিফ ইউনিয়নের দরবেশপুর গ্রামের ওলি উল্যার ছেলে হানিফ ও একই ইউনিয়নের বাহাদিপুর গ্রামের আবুল কাশেমেরে ছেলে কামরুল।
ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ জানান, গত শুক্রবার ভোরে তাদের বাড়ি (সুবর্ণচর) থেকে পারিবারিক বিষয় নিয়ে রাগ করে বের হয়ে মাইজদী চলে আসেন তার স্বামী। পরে স্বামীর পেছনে পেছনে অন্য একটি গাড়ি নিয়ে মাইজদী পৌর বাজার আসেন তিনি। সকাল ৭টার দিকে স্বামী-স্ত্রী দুজন পৌর বাজারের একটি দোকানের সামনে তর্ক-বির্তকে লিপ্ত হন।
এর এক পর্যায়ে বখাটে হানিফ’সহ ২জন এগিয়ে এসে ছেলেটিকে? জানতে চাইলে, তিনি তার স্বামী বলে তাদেরকে জানান। তারপরও হানিফ’সহ ওই ২জন তার স্বামীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর শুরু করে।
এর কিছুক্ষণ পর বিষয়টি সমাধান করে দেয়ার কথা বলে তাদের ২জনকে পৌর বাজারের একটি পরিত্যাক্ত ভবনের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যায়। সেখানে হানিফদের সাথে আরও ৪-৫ জন যুবক যুক্ত হয়ে স্বামীকে একটি কক্ষে ও স্ত্রীকে আরেকটি কক্ষে নিয়ে যায়।
পরে বিষয়টি তার স্বামী মুঠোফোনে তার মাকে (মাইজদী বাসায় থাকা) জানালে, তার মা ও ছোট ভাই ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির নিচে থাকা আরও কয়েকজন তার মা ও ছোট ভাইকে একই কক্ষে এনে আটক করে রাখে।
পরবর্তীতে তারা পাশের কক্ষে ভুক্তভোগীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় এবং তার পরনের জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলে। ধর্ষণের চেষ্টাকারীদের সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে দ্বিতীয় তলার ছাদ থেকে নিচে লাফ দিয়ে পড়েন তিনি (গৃহবধূ)।
ভুক্তভোগীর শাশুড়ি বলেন, লাফ দেয়া ও তার চিৎকার শুনে তারা ৩জন ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে দেখেন, গৃহবধূ নিচে আহত অবস্থায় পড়ে আছে, সে উঠে দাঁড়াতে পারছে না।
এসময় ওই যুবকরা আবারও তাকে টেনে হিঁছড়ে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে বখাটেরা পালিয়ে যায়। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তার বাম পায়ে লোহার রড ঢুকে কেটে এবং ভেঙে গেছে। পরে বিষয়টি তারা পৌর বাজার ব্যবসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম মুক্তারকে জানান। এর মাঝে ওইদিন তারা গৃহবধূর চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় থানায় অভিযোগ করতে পারেননি।
পৌর বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম মুক্তার জানান, ঘটনার দিন তিনি নোয়াখালীর বাইরে ছিলেন। পরদিন নোয়াখালী আসার পর তিনি আহত গৃহধূকে হাসপাতাল দেখতে যান এবং তার কাছ থেকে ঘটনার বিষয়টি শুনে স্থানীয়দের কাছ থেকে ওই যুবকদের তথ্য নেন।
রোববার বিকেলে তাদের মধ্যে হানিফ প্রকাশ ফকির ও কামরুলকে পৌর বাজারে দেখতে পেয়ে লোকজন আটক করে। পরবর্তীতে তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের আটক করে আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করবো।
সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে অভিযুক্তদের আটক করেছে। ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ঘটনায় জড়িত অপর আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে।