মিরাজ আহমেদ মাগুরা >>> মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার আমতৈল গ্রামের ‘ স্টাইলস্মিথ সানএ্যাপারেলস লিমিটেড পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে স্বাবলম্বী হাজারো নারী। কারখানাটির ১০০% রপ্তানীমূখী তৈরী পোশাক শিল্প কারখানা বিশ্ব বাজারের চাহিদা মিটানোর জন্য রপ্তানি হচ্ছে,ইউরোপে ৮০% আমেরিকা ১৫% অন্যান্য দেশ ৫%।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকালে কারখানাটিতে দেখা যায়, এখানে তৈরি হচ্ছে শার্ট,প্যান্ট,ব্লেজার,লেডিস এবং কিডস্ আইটেমের পোশাক। প্রায় তিন হাজার পাঁচশত শ্রমিক তৈরি করছে প্রতি মাসে ৭ লক্ষ পিস রপ্তানি মুখী তৈরি পোশাক। এই পোশাক কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন মাগুরা জেলার বেকার নারী ও পুরুষেরা। কারখানাটির সংশ্লিষ্ট তথ্যসূত্রে জানা গেছে, ১৬৮০ জন পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছেন ১৮২০ জন নারী।নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে প্রতিষ্ঠানটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,কারখানার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বিশিষ্ট শিল্পপতি ফারুকুল ইসলামের স্বপ্ন ছিল এলাকার মানুষকে স্বাবলম্বী করা। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে শ্রীপুর উপজেলার আমতৈল গ্রামে স্টাইলস্মিথ সানএ্যাপারেল্স লিমিটেড পোশাক কারখানাটি স্থাপন করেন ২০১৫ সালে। যেখানে কাজ করছেন ওই এলাকার স্থানীয় বেকার নারী পুরুষ। বিভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে কারখানাটি এগিয়েও যাচ্ছে।
স্টাইলস্মিথ সানএ্যাপারেল্স লিমিটেডে নিয়োজিত চিকিৎসক ডাঃ আসিফ বলেন, এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি কারখানার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য বিষয়ে মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করেন। স্টাইলস্মিথ সানএ্যাপারেল্স লিমিটেড এর জেনারেল ম্যানেজার ও হেড অফ সাসটেইনএবিলিটি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে ৪০০ শত সেলাই মেশিন ও ৮০০ শ্রমিক দিয়ে গার্মেন্টস এর যাত্রা শুরু হয়।
২০২৪ সালে তা দাঁড়ায় ৩,০০০ হাজার মেশিন এবং ৩,৫০০ শ্রমিকে।কারখানাটির বাৎসরিক আয় ৪৪ মিলিয়ন ইউ এস ডলার, কাঁচামাল এবং সরকারের সহযোগিতা পেলে ৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার রপ্তানি সম্ভব। তিনি আরো বলেন,মাগুরা জেলা ও পুলিশ প্রশাসন থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। যে সকল বৈদেশিক বায়ার, কর্মকর্তা, কর্মচারী এ জেলার বাইরে থেকে এসে এখানে কাজ করে তাদেরকে যাতে কেউ হয়রানি করতে না পারে, সেজন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি। স্টাইলস্মিথ সানএ্যাপারেল্স লিমিটেড এর তিনি আরও বলেন, এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষকে কর্মের সন্ধানে ঢাকায় যেতে হয়। আমাদের এই গার্মেন্টসের মাধ্যমে স্থানীয় কর্মজীবীরা এলাকাতেই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন।
মালিকপক্ষ কারখানাটির শ্রমিকদের বেতন বাবদ প্রতি মাসে ৫ কোটি টাকা প্রদান করেন। এই টাকার সিংহভাগ অংশই এই জেলার মধ্যে লেনদেন হয়। তিনি আরও বলেন, মালিক পক্ষের চিন্তাভাবনা রয়েছে, এই পোশাক শিল্পকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়ে বেকারত্ব দূরীকরণে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার। কারখানার শ্রমিক মমতাজ জোয়ারদার আইডি নং(২৩৪৮) বলেন,দীর্ঘদিন বেকার জীবন পার করছিলাম।পরিবার-পরিজনকে আত্মনির্ভরশীল করতে পারিনি। এখন বাড়ির পাশে গার্মেন্টসে চাকরি করছি, প্রতি মাসে ভালো বেতন পাচ্ছি।
কাজের পাশাপাশি বাড়িতে গরু,ছাগল,হাঁস-মুরগি পালন করছি।ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াতেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সোনিয়া খাতুন আইডি নং (৪৭৬৫) তিনি বলেন, গ্রামের চিকিৎসা থেকে এখানের চিকিৎসা সেবা অনেক উন্নত এবং ভালো, আমরা সব সময় তাদের সহযোগিতা পাই।মোসাম্মৎ নার্গিস খাতুন আইডি নং (৪৭৭) তিনি বলেন, মাস শেষে বেতন পাই কিছু টাকা সঞ্চয় করি,আর কিছু টাকা পরিবারের সদস্যদের মাঝে ব্যয় করি। বাড়ির পাশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়াতে অনেকটা ভালো হয়েছে। শেফালী কর্মকার আইডি নাং(২৩৪৮) বলেন ঢাকায় গার্মেন্টসের চাকরি করে বাসা ভাড়া,খাওয়া মিলে টাকা জমানো কঠিন। বাড়ির পাশে চাকরি করে বেতনের সম্পূর্ণ টাকা জমা রাখছি। পাশাপাশি আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহীন হোসেন বলেন, মাগুরা গার্মেন্টস কারখানা তৈরি হওয়ায় স্থানীয় নারী ও পুরুষদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এই পোশাক কারখানা স্থানীয়দের অভাব দূর করবে।
পোশাক কারখানার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বিশিষ্ট শিল্পপতি ফারুকুল ইসলাম বলেন, বেকার ও হতদরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এই গার্মেন্টস কারখানাটি তৈরি করা হয়েছে। এই এলাকায় বেকার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে এই গার্মেন্টসটি আরও বড় পরিসরে করা যাবে। এতে হাজারো নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পুলিশ সুপার কালিমুল্লা বলেন, কর্মরত নারী শ্রমিক এবং তাদেরসাথে অবস্থানরত নাবালক শিশু এর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও গণউপদ্রব প্রতিরোধের লক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক, পরামর্শক বা অন্য কোনভাবে নিয়োজিত বা কর্মরত দেশী- বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষে বা নিরাপত্তার জন্য হানিকর হতে পারে এইরূপ কোন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে বা ঘটবার আশংকা দেখা দিলে ইহা প্রতিরোধের লক্ষে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।